সালমান এফ রহমান ও সংশ্লিষ্ট ১৭ প্রতিষ্ঠান ৫ বছরে ৯৭ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে: সিআইডি
সালমান এফ রহমান ও তার সংশ্লিষ্ট ১৭টি প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে পাঁচ বছরে ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা) পাচার করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ইউনিটটির প্রধান ছিবগাতউল্ল্যাহ জানান, তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন পেয়েছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ই...
সালমান এফ রহমান ও তার সংশ্লিষ্ট ১৭টি প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে পাঁচ বছরে ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা) পাচার করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ইউনিটটির প্রধান ছিবগাতউল্ল্যাহ জানান, তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন পেয়েছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
ওই ১৭টি মামলায় বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমানসহ মোট ২৮ ব্যক্তি ও জড়িত মোট ১৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে তদন্ত শেষে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ মোতাবেক আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের নিমিত্তে সিআইডি প্রধান কর্তৃক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে জেলে থাকা সালমান এফ রহমানকে এসক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পাশাপাশি বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অটাম লুপ অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার ওয়াসিউর রহমানকে গত জুলাইয়ে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এএসএফ রহমান, ভাইস সালমান এফ রহমান ও অন্যান্য সহযোগীরা মোট ১৭টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে এই অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—অ্যাডভাঞ্চার গার্মেন্টস, অ্যাপোলো অ্যাপারেলস, অটাম লুপ অ্যাপারেলস, বেক্সটেক্স গার্মেন্টস, কসমোপলিটন অ্যাপারেলস, কজি অ্যাপারেলস, এসেস ফ্যাশন, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস, কাঁচপুর অ্যাপারেলস, মিডওয়েস্ট গার্মেন্টস, পিয়ারলেস গার্মেন্টস, পিংক মেকার গার্মেন্টস, প্ল্যাটিনাম গার্মেন্টস, স্কাইনেট অ্যাপারেলস, স্প্রিংফুল অ্যাপারেলস, আরবান ফ্যাশন এবং উইন্টার স্প্রিন্ট গার্মেন্টস লিমিটেড।
তদন্তে আরও উঠে আসে, তারা এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক পিএলসি, মতিঝিল শাখা থেকে এলসি বা বিক্রয় চুক্তির ব্যবস্থা করেছিল। তবে রপ্তানির বিপরীতে অর্জিত অর্থ দেশে ফেরত নিয়ে আসেনি। এভাবে রপ্তানির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুবাইয়ের আর আর গ্লোবাল ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে চলে যেত সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, আইয়ারল্যান্ড ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে। আর আর গ্লোবাল ট্রেডিংয়ের মালিকানা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং এএসএফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে নিবন্ধিত।
ইতোমধ্যে এসব মামলা সংক্রান্তে আদালতের আদেশে আসামিদের বিভিন্ন সম্পদ ক্রোক করেছে সিআইডি। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা জেলার দোহার থানার ২ হাজার শতাংশ জমি ও তদস্থিত স্থাপনা, গুলশানের 'দ্য এনভয়' বিল্ডিংয়ের ৬ হাজার ১৮৯ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এবং গুলশান আবাসিক এলাকার ৬৮/এ রাস্তার, ৩১ নম্বর প্লটে অবস্থিত ২ হাজার ৭১৩ বর্গফুটের আরও একটি ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট। এ ছাড়া সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার পাশাপাশি তাদের বিদেশ গমনও রোধ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্রোককৃত সম্পত্তির বর্তমান আনুমানিক মূল্য ৬০০-৭০০ কোটি টাকা।