শেষের পথে ওষুধ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী, একনেকে প্রকল্প উঠেছে আজ
সরকারের কাছে পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী ও চিকিৎসা সরঞ্জামের যে মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে চলতে পারে মাস দুয়েক। একইসঙ্গে বেশকিছু ওষুধের মজুতও শেষের পথে।এরই প্রেক্ষাপটে আজ সোমবার একনেকে এ সংক্রান্ত তিনটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এসব প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুতই মজুত ঘাটতি দূর করা যাবে।৩ হাজার ৪২২ কোটি টাকার এই তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও হাসপাতালের আসবাবপত্র কেনার পাশাপাশি কয়েকটি উপজেলা হাসপাতালের অসমাপ্ত সম্প্রসারণ কাজও শেষ করা হবে।...
সরকারের কাছে পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী ও চিকিৎসা সরঞ্জামের যে মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে চলতে পারে মাস দুয়েক। একইসঙ্গে বেশকিছু ওষুধের মজুতও শেষের পথে।
এরই প্রেক্ষাপটে আজ সোমবার একনেকে এ সংক্রান্ত তিনটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এসব প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুতই মজুত ঘাটতি দূর করা যাবে।
৩ হাজার ৪২২ কোটি টাকার এই তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও হাসপাতালের আসবাবপত্র কেনার পাশাপাশি কয়েকটি উপজেলা হাসপাতালের অসমাপ্ত সম্প্রসারণ কাজও শেষ করা হবে।
২ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প প্রস্তাব রয়েছে, যার মাধ্যমে ওষুধ সংগ্রহ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটির যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে এবং পরবর্তী একনেক সভায় উপস্থাপিত হতে পারে।
গত বছরের জুনে চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচি (এইচপিএনএসপি) শেষ হওয়ার পর থেকে ওষুধ, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহে বিঘ্ন ঘটে।
এ ছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকার গত বছর প্রস্তাবিত পঞ্চম এইচপিএনএসপি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর অনেক হাসপাতালের সম্প্রসারণ কাজ, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও ওই কর্মসূচির আওতায় নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতনও বন্ধ হয়ে যায়।
অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও একসময় একাধিক পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করত। তবে প্রকল্পের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সমন্বয় জটিলতা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এসব প্রকল্পের অনেকগুলোই ছিল বিদেশি অনুদাননির্ভর।
এই সমস্যা সমাধানে ১৯৯৮ সালে প্রকল্পগুলো একত্র করে প্রথম এইচএনপিএসপি নামে একটি পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
একই ধরনের প্রকল্প নির্দিষ্ট অপারেশনাল পরিকল্পনার আওতায় আনা হয়েছিল। যেমন: প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, রোগ নিয়ন্ত্রণ, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যশিক্ষা এবং পরিবার পরিকল্পনা।
গত ২৭ বছরে মন্ত্রণালয়টি চারটি খাতভিত্তিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে, যার মধ্যে ২৯টি অপারেশনাল পরিকল্পনা নিয়ে চতুর্থ এইচএনপিএসপি শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘদিনের এই পদ্ধতি থেকে সরে এসে খাতভিত্তিক কর্মসূচিকে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নিয়মিত কার্যক্রমের সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা নেয়, যাতে সমন্বয় বাড়ে এবং দেশের মৌলিক স্বাস্থ্য অবকাঠামো আরও শক্তিশালী হয়।
কর্মকর্তারা জানান, জনবল, ওষুধ, প্রতিষেধক টিকা, জরুরি পরিবার পরিকল্পনা সেবা, সরঞ্জাম ও রক্ষণাবেক্ষণের মতো জরুরি বিষয়গুলো মোকাবিলায় সরকার চারটি স্বল্পমেয়াদি প্রকল্পসহ দুই বছরের একটি এক্সিট প্ল্যান হাতে নিয়েছে।
তবে এসব প্রকল্প চূড়ান্ত করতে প্রায় এক বছর সময় লেগে যায় এবং এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে কিছু জরুরি প্রয়োজন মেটাতে থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়।
আজ যে প্রকল্পগুলো একনেকে উঠছে, তার মাধ্যমে একটি চতুর্থ এইচএনপিএসপির আওতায় অসমাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা, মাতৃ, শিশু ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।
১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুলাই থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত চলবে। মোট বরাদ্দের মধ্যে ৯৪৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কেনায়, ১৯৩ কোটি টাকা ওষুধে এবং ৫৪ কোটি টাকা সরঞ্জামে।
প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রধান ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশরাফি আহমাদ বলেন, সরবরাহ ঘাটতি থেকে সৃষ্ট সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
তিনি জানান, আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলবে এমন মজুদ আছে। তবে, সাধারণত ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় চার মাস সময় লাগে।
তিনি বলেন, 'প্রকল্পের অনুমোদন পেলে সরবরাহে আর বিঘ্ন ঘটবে না বলে আশা করছি।'
আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে পাঁচটি অপারেশনাল পরিকল্পনার আওতায় অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা এবং ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়িত হবে।
এই প্রকল্পের আওতায় ২২টি উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরের অসমাপ্ত কাজ শেষ করা, এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য আসবাবপত্র কেনা ও অন্যান্য সম্পর্কিত কাজ সম্পন্ন করা হবে।
তৃতীয় প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো চিকিৎসা শিক্ষা অধিদপ্তর, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর এবং জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চতুর্থ এইচএনপিএসপির অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করা।
২১২ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। এর আওতায় মূলত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় এবং অন্যান্য সম্পর্কিত কাজে অর্থ বরাদ্দ করা হবে।