আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করার দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩০ অক্টোবর সকাল ১১টায় রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার তিস্তাপাড়ের মানুষ একযোগে ১৫ মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাবেন। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে 'স্তব্ধ রংপুর'।

এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি। সংগঠনটির ডাকে এর আগে গত ১৬ অক্টোবর রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মশাল প্রজ্বালন করে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু।

তিনি বলেন, 'সরকার যদি আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু না করে, তবে তিস্তাপাড়ের মানুষকে নিয়ে আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।' তিনি আরও বলেন, 'তিস্তা নদী শুধু একটি নদী নয়—এটি আমাদের জীবন, জীবিকা, সংস্কৃতি ও অস্তিত্বের প্রতীক। এর পানির প্রবাহে জড়িয়ে আছে দুই কোটিরও বেশি মানুষের ভাগ্য।'

এর আগেও রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় এই দাবিতে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তাপাড়ের ১১টি পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন লাখো মানুষ। ৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হয়। ৯ অক্টোবর তিস্তাপাড়ের উপজেলা শহরগুলোতে গণমিছিল এবং ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় তিস্তা নদীর দুই তীরে ১০৫ কিলোমিটারজুড়ে একযোগে মশাল প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করা হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তাপাড়ে এক গণশুনানিতে অংশ নিয়ে দ্রুত প্রকল্পের কাজ শুরুর প্রতিশ্রুতি দেন। তবে পরে তিনি জানান, ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু হতে পারে।

দুই ধাপে ১০ বছরের মেয়াদে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ধাপে পাঁচ বছরে ৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা চীন থেকে ঋণ এবং ২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়ার কথা।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং নদী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, 'তিস্তা মহাপরিকল্পনা বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে তিস্তাপাড়ের মানুষের কল্যাণ হবে। এই নদীর পুনরুজ্জীবন মানেই বন্যা, খরা আর ভাঙনের দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি।'

তিনি আরও বলেন, 'বর্ষায় তিস্তাপাড়ে একের পর এক বন্যা, তারপর ভাঙন; শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। মানুষকে প্রতিদিন সংগ্রাম করে বাঁচতে হয়। তিস্তা বাঁচলে বাঁচবে কৃষি, বাঁচবে পরিবেশ, বাঁচবে জীববৈচিত্র্য, বাঁচবে মানুষ।'

তিনি বলেন, ৩০ অক্টোবরের ১৫ মিনিটের নীরবতা কেবল একটি কর্মসূচি নয়, এটি হবে উত্তরবঙ্গের মানুষের সম্মিলিত প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি—একটি প্রতীকী ঘোষণা, যে তিস্তা বাঁচলে বাঁচবে উত্তরবঙ্গ, তিস্তা বাঁচলে বাঁচবে বাংলাদেশ।