দীর্ঘ ২০ বছর পর আগামীকাল সোমবার বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য।

জেইসি বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন অর্থউপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) একজন কর্মকর্তা গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। পাকিস্তান বাংলাদেশে যত বেশি রপ্তানি করে, বাংলাদেশ ততটা করে না। আমরা পাকিস্তানে রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করব।'

ইআরডি সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে ৭৮৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, বিপরীতে রপ্তানি করেছে মাত্র ৮০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। এ কারণে বৈঠকে পাকিস্তানি বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চাইবে ঢাকা।

ঢাকা ও ইসলামাবাদের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, কৃষি গবেষণা, হালাল ফুড, তথ্যপ্রযুক্তি ও নৌপরিবহনসহ কয়েকটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। ইআরডির ওই কর্মকর্তা জানান, আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকলেও জেইসি বৈঠকের সময় এমওইউগুলো স্বাক্ষরিত হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুতে ১৫ বছর পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্র দপ্তর পর্যায়ের বৈঠক (ফরেন অফিস কনসালটেশন) অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া গত বছরের আগস্টের পর থেকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন রাজা নকভি ঢাকা সফর করেছেন। এই সময়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনও ইসলামাবাদ সফর করেন।

গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক চাই।' তিনি বলেন, ঢাকা পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা চায়, যা দীর্ঘদিন ধরে একতরফাভাবে স্থবির হয়ে ছিল।

তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, 'পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, আমাদের স্বার্থের জন্যই প্রয়োজন। আমরা মনে করি, আমরা সে পথেই এগোচ্ছি।'