আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা তার আগে যেকোনো দিন গণভোট আয়োজন ও নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তান্তর করে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, 'গণভোটের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এখনো আছে। এই প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন এবং গণভোট অনুষ্ঠানকে সবাই মনে করেছেন যে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য এটা একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত।'

তিনি বলেন, 'সেই বিবেচনা থেকেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গণভোট অনুষ্ঠানের প্রস্তাব সুপারিশ করেছে। গণভোট অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তারিখ বিষয়ে ভিন্নমতের কথা বিবেচনা করে এবং এর যেহেতু একটি লজিস্টিক্যাল আসপেক্ট আছে এটা কীভাবে করা যাবে সে বিষয়ে কমিশনের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে তথ্য নেই।

'আমরা সরকারকে বলেছি তারা যেন সংসদের সাধারণ নির্বাচনের দিন বা তার আগে যেকোনো দিন গণভোট অনুষ্ঠান করে। আমরা এটা লিখিতভাবে বলেছি। আমরা সরকারকে বলেছি তারা যেন অবিলম্বে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি নির্বাচনী তফসিল তৈরি করে,' যোগ করেন তিনি।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, 'জুলাই সনদ যেন আইনি ভিত্তি পায়, ভবিষ্যতের পথরেখা হিসেবে যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো যেন বাস্তবায়িত হয়। গত ১৭ অক্টোবর সনদ সই হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ভাষায় এই অঙ্গীকার করা হয়েছে যে তারা এগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হলেন।'

জুলাই সনদের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশন তিন ভাগে সুপারিশ দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'প্রথমটি হচ্ছে যেসব বিষয়ে সাংবিধানিক বিষয় সংশ্লিষ্ট নয়, সেগুলোর বিষয়ে সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারেন। সেটা যেন অবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবায়িত করা হয়।'

দ্বিতীয় ভাগে তিনি জানান, অনেকগুলো সুপারিশ সরকারি নির্দেশ বা অফিস আদেশ দিয়েও বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সেগুলো যেন সরকার দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করে।

এ দুটো বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনরকম ভিন্নমত নেই বলেও উল্লেখ করেন আলী রীয়াজ।

কমিশন সহ-সভাপতি বলেন, 'সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দিতে এবং বাস্তবায়নের পথ নির্দেশ করতে তৃতীয় সুপারিশে বলেছি দুটো বিকল্প সরকারের হাতে আছে।'

তিনি বলেন, 'আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি সরকার যেন অবিলম্বে আদেশ জারি করে জুলাই সনদের সংবিধান সংস্কার বিষয়ক সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে একটি গণভোটের আয়োজন করে। এই গণভোটে যেন একটি প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। সেটি হলো, ৪৮টি সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয় বাস্তবায়নের ব্যাপারে জনগণের সম্মতি আছে কি না।'

'সুপারিশে বলা হয়েছে যে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ একইসঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদ এবং জাতীয় সংসদ হিসেবে কার্যকর থাকবে। তবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ কার্যকর থাকবে ২৭০ দিন। এই সময়ের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্যরা জাতীয় সনদে বর্ণিত বিষয়গুলো সংবিধানে সংযুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান, প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্তন, পরিমার্জন করবেন,' বলেন তিনি।

উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার সুপারিশে ঐকমত্য কমিশন বলছে, ভোটের সংখ্যানুপাতে ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠায় জনগণের সম্মতি পাওয়া গেলে জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার ৪৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ক প্রয়োজনীয় সংশোধনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হবে।