নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ আদালত চত্বরে এক মামলার বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, সাখাওয়াত হোসেন খানের নির্দেশে অপর আসামিরা আদালত চত্বরে হামলা করে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে ফতুল্লা মডেল থানায় এ মামলা রেকর্ড করা হয় বলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী।

গত রোববার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের সামনে শহরের কালিরাবাজারের স্যানেটারি ব্যবসায়ী ইরফান মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা হামলার শিকার হন। হামলায় ইরফান ছাড়াও তার স্ত্রী ও দুই সন্তান আহত হন। মারধরের ঘটনার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ঘটনার দিন বিকেলে ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন রাজিয়া। কিন্তু অভিযোগে সাখাওয়াত হোসেন খানের নাম থাকায় সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে পুলিশ গড়িমসি করছিল বলে অভিযোগ করেন রাজিয়া।

গতকাল রেকর্ড হওয়া মামলায় হামলা চালিয়ে হত্যাচেষ্টার উদ্দেশে গুরুতর জখমের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে আরও আছেন, সাখাওয়াতের ঘনিষ্ঠ অনুসারী আইনজীবী খোরশেদ আলম, মো. আল আমিন ও বিল্লাল হোসেন, সাখাওয়াতের সহকারী হিরণ বাদশা, ইসমাইল, শাহ আলম, টিটু ও রাসেল বেপারী।

এছাড়া, অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জন হামলায় অংশ নিয়েছিল বলেও অভিযোগ রাজিয়ার।

সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষ থেকে একাধিক ব্যক্তি মামলা না করতে চাপ ও হুমকি দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ করেন রাজিয়ার বড় ছেলে মোহাম্মদ জিদান।

সোমবার রাত পর্যন্তও মামলাটি রেকর্ড না হওয়ায় ক্ষুব্ধ রাজিয়া তার সন্তানদের নিয়ে থানায় অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেন। থানায় তাদের অবস্থানের ভিডিও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। পরদিন রাতে পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে।

মামলা রেকর্ড করতে দেরি হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসিনুজ্জামান বলেন, 'আদালত চত্বরের ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর, তাই বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত, ভিডিও যাচাই-বাছাই করে তারপর মামলা রেকর্ড করেছি।'

তবে মামলায় বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার নেই বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

রাজিয়া সুলতানা মামলার এজাহারে বলেন, তার স্বামী ইরফান মিয়া অপর এক ব্যবসায়ী ইসমাইলের কাছে স্যানেটারি পণ্য বিক্রির ২৫ লাখ টাকা পান। গত এক বছর ধরে এই বকেয়া আদায় সম্ভব হচ্ছে না। উল্টো ইসমাইল তাদের হুমকি দিয়েছেন। 

এ ঘটনায় কয়েকমাস আগে নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারা একটি মামলাও করেন।

মামলাটি বিবাদী ইসমাইলের পক্ষে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান লড়ছেন বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবার।

ওই মামলায় রোববার আদালতে হাজিরা থাকায় বাদী ও তার পরিবারের সদস্যরাও সেখানে যান। আদালত প্রাঙ্গণে বাদীপক্ষের লোকজনকে দেখতে পেয়ে সাখাওয়াত হোসেনের নির্দেশে তার অনুসারী আইনজীবী ও সহকারী মিলে হামলা চালান বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন রাজিয়া।

মারধরের ঘটনার ছড়িয়ে যাওয়া ভিডিওতে সাখাওয়াত হোসেনের ঘনিষ্ঠ অনুসারী খোরশেদ আলম, আল-আমিন ও মুহুরি হিরণ বাদশাকে দেখা যায়।

এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন দাবি করে বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ঘটনার সময় কোর্টে ছিলাম। পরে গিয়ে এই ঘটনার কথা শুনেছি ও ভিডিও দেখেছি। আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই, তার প্রমাণ ভিডিওতেও আমাকে দেখা যায় না।'

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে বিতর্কিত করতে এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দেখাতে চাইছে বলেও দাবি সাখাওয়াতের।

অপর অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট মো. আল-আমিন পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, 'কয়েকজন ব্যক্তি মুহুরি হিরণ ভাইকে মারধর করছিল। এটা দেখে আমি একবার তাদের থামাই। পরে তারা আমার ওপর চড়াও হয়।'

সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষে আজ বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালত চত্বরে মানববন্ধনও করেছেন তার অনুসারী আইনজীবীরা।

এদিকে, রোববারের ঘটনায় সোমবার ফতুল্লা মডেল থানায় আরেকটি লিখিত অভিযোগ দেন এসএম আশরাফুজ্জামান নামে আরেক ব্যক্তি। তিনি বিবাদী ইসমাইলের ভাই। তার দাবি, ইরফান ও তার পরিবারের সদস্যরা আদালত চত্বরে তাদের ওপর হামলা চালান।

তবে এ অভিযোগটি এখন পর্যন্ত মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসিনুজ্জামান। তিনি বলেন, 'অভিযোগটি যাচাই-বাছাই চলছে। তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'