কমিশনের মেয়াদ শেষ, ঐক্য এখনো অধরা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ গতকাল শুক্রবার শেষ হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং চারটি বামপন্থী দল এখনো জুলাই সনদে সই করেনি।সনদে সাংবিধানিক সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত তিনটি প্রধান দল- বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি।কমিশন গত ২৮ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জুলাইয়ের জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেয়।এতে প্রস্তাব করা হয়, সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সাংবিধানিক সংস্কার) আদেশ জারি করবে এবং সেই আদেশের অধীনে জনসমর্থন নিশ্চি...
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ গতকাল শুক্রবার শেষ হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং চারটি বামপন্থী দল এখনো জুলাই সনদে সই করেনি।
সনদে সাংবিধানিক সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত তিনটি প্রধান দল- বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি।
কমিশন গত ২৮ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জুলাইয়ের জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেয়।
এতে প্রস্তাব করা হয়, সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সাংবিধানিক সংস্কার) আদেশ জারি করবে এবং সেই আদেশের অধীনে জনসমর্থন নিশ্চিত করার জন্য একটি গণভোট আয়োজন করবে।
এটি পরবর্তী সংসদকে আইন প্রণয়নের দায়িত্ব পালনের সময় সাংবিধানিক সংস্কার তদারকির জন্য ২৭০ দিনের জন্য দ্বৈত ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করেছে। যদি তারা সময়সীমার মধ্যে সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে।
পাঁচটি দল- এনসিপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) সনদে সই করেনি।
গতকাল সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সরকার গণভোটের আদেশ জারি করলেই তার দল সনদে সই করবে।
চারটি বামপন্থী দল জানিয়েছে, তারা এমন কোনো নথিতে সই করবে না, যা সংবিধানের চারটি মৌলিক ভিত্তি: গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ পরিবর্তনের ঝুঁকি তৈরি করে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, তার দল ভবিষ্যতে সনদের আইনি চ্যালেঞ্জ প্রতিরোধের যেকোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করে।
গতকাল দ্য ডেইলি স্টার কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি আবার একাডেমিক কাজে ফিরে যাবেন। তবে 'ব্যক্তিগত জায়গা থেকে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবেন।'
এখনো সনদে এনসিপি সই করতে পারে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু কমিশন আর নেই, তাই দলটি এখন সরাসরি সরকারের মাধ্যমে সই করতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার এখন সনদ সই সম্পর্কিত বিষয়গুলো তদারকি করবেন।
মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টা আমাকে যা করার পরামর্শ দেবেন, আমি তাই করব।'
ছয়টি সংস্কার সংস্থার সুপারিশের ওপর রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির জন্য গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সাত সদস্যের কমিশন গঠন করে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে ছিলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
কমিশনের কাজ ছিল ২০২৪ সালের আন্দোলনের রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে নির্বাচন, প্রশাসন, বিচার, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং পুলিশিংয়ে সংস্কারের ওপর একটি জাতীয় চুক্তি তৈরি করা।
কমিশন দুই দফা আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব তৈরি করে। প্রস্তাবের অর্ধেকই ছিল সাংবিধানিক সংস্কার সম্পর্কিত। বিএনপি এবং এর মিত্ররা কমপক্ষে নয়টি দফায় ভিন্নমত পোষণ করেছিল।
গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ২৪টি দল জুলাই সনদে সই করে। দুই দিন পর গণফোরাম এতে সই করে।
১০ সেপ্টেম্বর সনদের চূড়ান্ত খসড়া সব দলের কাছে পাঠানো হয়, এরপর বাস্তবায়নের বিষয়ে তৃতীয় দফা আলোচনা হয়।
দলগুলো একমত হয়েছিল যে, সংবিধান-বহির্ভূত সংস্কারগুলো আইন বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে করা হবে, আর সংবিধান সংশোধন গণভোটের মাধ্যমে হবে। তবে গণভোটের সময়, পদ্ধতি বা কাঠামো নিয়ে কোনো ঐক্য হয়নি।
১৪ অক্টোবর তৃতীয় দফা আলোচনা শেষ হওয়ার পর কমিশন চূড়ান্ত সনদটি দলগুলোর কাছে বিতরণ করে এবং পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতি চায়।
সনদে দলগুলোকে বলা হয়, তারা আদালতে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করবে না এবং এটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে সহায়তা করবে, সেটা সূচি হিসেবে হোক বা অন্য কোনো ধারা হিসেবে।
১৭ অক্টোবর জুলাই যোদ্ধাদের চাপের মুখে কমিশন শেষ মুহূর্তে সনদে সংশোধনী আনে। এতে জুলাই শহীদদের পরিবার এবং আহতদের জন্য আইনি ক্ষতিপূরণ, মৌলিক অধিকার এবং সুরক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।