আসন বণ্টনে দেরি নিয়ে বিএনপি জোটে অসন্তোষ
জোটের আসন বণ্টনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই নিজেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। এতে জোটভুক্ত দলের নেতারা হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলা এক ডজনেরও বেশি জোটনেতা জানিয়েছেন, জোটভুক্ত দলগুলোর দাবি করা আসনের চেয়ে বিএনপি কম আসন বরাদ্দ রেখেছে। এমনকি ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতেও নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে। এতে জোটে অসন্তোষ তৈরি দিয়েছে।আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটভুক্ত ১২ দলীয় জোট ও গণতন্ত্র মঞ্চের অধীনে থাকা তিন ডজনেরও...
জোটের আসন বণ্টনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই নিজেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। এতে জোটভুক্ত দলের নেতারা হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলা এক ডজনেরও বেশি জোটনেতা জানিয়েছেন, জোটভুক্ত দলগুলোর দাবি করা আসনের চেয়ে বিএনপি কম আসন বরাদ্দ রেখেছে। এমনকি ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতেও নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে। এতে জোটে অসন্তোষ তৈরি দিয়েছে।
আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটভুক্ত ১২ দলীয় জোট ও গণতন্ত্র মঞ্চের অধীনে থাকা তিন ডজনেরও বেশি দল আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল।
এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে ছিল—লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), গণফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টিসহ অন্যান্য সমমনা দল।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রার্থী ঘোষণার আগে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনার কথা দিয়েছিল বিএনপি, কিন্তু তারা তা করেনি। এতে সহযোগী দলগুলো ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হয়েছে।'
সাইফুল হকের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ছয়দলীয় গণতন্ত্র মঞ্চের সদস্য। এই জোট আওয়ামী সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত ছিল।
তিনি বলেন, 'গণতন্ত্র মঞ্চ আমাকে ঢাকা-৮ আসনের মনোনয়ন দিয়েছিল, কিন্তু বিএনপি একই আসনে মির্জা আব্বাসকে প্রার্থী করেছে। এমনকি গণতন্ত্র মঞ্চের জন্য বরাদ্দ তিন-চারটি আসন ছাড়া, প্রায় সব আসনেই তারা নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে।'
এর আগে, গত ৯ অক্টোবর গণতন্ত্র মঞ্চ ১২০টির বেশি আসনের জন্য নিজেদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিল।
উল্লেখ্য, গত মাসে বিএনপি জোটের সহযোগী দলগুলোকে প্রার্থী তালিকা জমা দিতে বলেছিল। পরে সহযোগী ও মতাদর্শে ঘনিষ্ঠ দলগুলো মিলে মোট ২২২টি আসনের দাবি করেছিল।
সাবেক বিএনপি নেতা অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি (লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি) ৪০টি আসনে দাবি করেছিল, ১২-দলীয় জোট চেয়েছিল ২১টি, গণফোরাম ১৫টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯টি, বিজেপি (বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি) ৫টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ৬টি, এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) ১০টি আসন চেয়েছিল।
এরপর গত সোমবার বিএনপি ২৩৭টি আসনে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, সহযোগী দলগুলোর সঙ্গে আরও আলোচনা শেষে এই তালিকায় পরিবর্তন আসতে পারে।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি সহযোগীদের জন্য সর্বোচ্চ ৪০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৩টি আসন রাখা হয়েছে।
এলডিপিকে মাত্র দুটি আসনের প্রস্তাব করা হয়। দলটির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ বলেন, '২০১৮ সালে আমাদের পাঁচটি আসন ছিল, তবে আমাদের দল এখন বড় হয়েছে। তাই এবার বেশি আসন প্রয়োজন।'
জামিয়তে উলেমায়ে ইসলামের মহাসচিব মনজুরুল ইসলাম আফেন্দি বলেন, 'আমরা যেসব আসন চেয়েছিলাম, তার মধ্যে আটটিতে বিএনপি প্রার্থী দিয়েছে। এখন মাত্র পাঁচ থেকে ছয়টি আসন খালি রেখেছে।'
'তবে অল্প কিছু নিয়ে সমঝোতায় যেতে আমরা আগ্রহী না,' বলেন তিনি।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান বলেন, 'আমি বগুড়া–২ আসন থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বিএনপি সেখানে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে। সত্যি বলতে, এটা খুবই হতাশাজনক।'
জোটের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, তারা শিগগিরই বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আরও আসনের দাবি জানাবেন।
বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান ও ১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, 'আমরা জোটের জন্য যেসব আসন চেয়েছিলাম তার মধ্যে কিছু জায়গায় বিএনপি নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ফলে জোটের ভেতরে দু:খ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছি। খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে।'
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, 'আমরা নয়টি আসন চেয়েছিলাম, কিন্তু বিএনপি মাত্র দুটি আসন ফাঁকা রেখেছে। আমরা আরও কিছু আসনের দাবি জানাব।'
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, 'আমরা ছয়টি আসন চেয়েছিলাম, কিন্তু পেয়েছি মাত্র একটি। আমরা ফরিদপুর–১ আসনের দাবি জানাব, যেখানে আমাদের মহাসচিবের নির্বাচন করার পরিকল্পনা করেছেন।'
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জোটের দলগুলোর জন্য প্রাথমিকভাবে ১৩টি আসন রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকির জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৬, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থের জন্য ঢাকা–১৭, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুরের জন্য পটুয়াখালী–৩, রাশেদ খানের জন্য ঝিনাইদহ–২ এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির এহসানুল হুদার জন্য কিশোরগঞ্জ–৫।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, সম্প্রতি জন প্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের কারণে আসন বণ্টন জটিল হয়ে পড়েছে। কারণ সহযোগী দলগুলো বিএনপির 'ধানের শীষ' প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না।
তিনি বলেন, 'আমাদের এখন সতর্কতার সঙ্গে আসন বণ্টন করতে হবে। কারণ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে না পারায় সহযোগী অনেক দল সমস্যায় পড়তে পারে।'
বিএনপির নেতারা বলেন, জোটের কিছু দলের শক্ত রাজনৈতিক ভিত্তি ও আগের নির্বাচনে ভালো করার রেকর্ড আছে। তবে বেশিরভাগ ছোট দলগুলোর সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি জাতীয় নাগরিক পার্টির জন্য ১০টি আসন রেখে দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। দলটি এখনো ঢাকা-১৮ ও ঢাকা-৯ আসন থেকে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। এই আসন থেকে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও তাসনিম জারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।