আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিক থেকে ভুল অবশ্যই হয়েছে: শেখ হাসিনা
ভারতের তিনটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম—দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস ও দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস—গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশের পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লিখিত সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে।দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, 'গণঅভ্যুত্থান সামলাতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিক থেকে ভুল অবশ্যই হয়েছে।'সাক্ষাৎকারে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভোট বর্জনের আহ্বান জানাননি দাবি করে তিনি বলেন, 'স্পষ্ট করে বলছি—আমি বর্জনের আহ্বান জানাইনি। আমি যা বলতে চেয়েছি তা হলো, যদি আওয়ামী লীগ সমর্থকদ...
ভারতের তিনটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম—দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস ও দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস—গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশের পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লিখিত সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে।
দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, 'গণঅভ্যুত্থান সামলাতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিক থেকে ভুল অবশ্যই হয়েছে।'
সাক্ষাৎকারে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভোট বর্জনের আহ্বান জানাননি দাবি করে তিনি বলেন, 'স্পষ্ট করে বলছি—আমি বর্জনের আহ্বান জানাইনি। আমি যা বলতে চেয়েছি তা হলো, যদি আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে কোটি কোটি ভোটার ভোট দেবে না।'
তিনি বলেন, 'যা-ই ঘটুক না কেন, আমাদের প্রচারণা শান্তিপূর্ণ থাকবে। বাংলাদেশে এই মুহুর্তে আরেকটি সহিংস অভ্যুত্থান প্রয়োজন নেই।'
বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, 'ভারতের জনগণ আমাকে নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ায় আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। ভারতের নির্ভরযোগ্য অংশীদার হতে পারাটা আমাদের গর্ব।'
দলের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে হাসিনা বলেন, 'আমরা আইনগত, কূটনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব, যাতে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার সাধারণ জনগণের হাতেই থাকে।'
জাতিসংঘের হিসেবে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। এই আন্দোলন দমনে নিজের ভূমিকা নিয়ে হাসিনা বলেন, 'সহিংসতা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য অবশ্যই ভুল করেছেন।'
তিনি বলেন, 'কিন্তু, যেটা বলা হচ্ছে যে আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রতিটি পদক্ষেপের নির্দেশ দিচ্ছিলাম—এটা আসলে নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যপ্রণালী সম্পর্কে ভুল ধারণা। আবারও বলছি, কোনো অবস্থাতেই আমি নিরাপত্তা বাহিনীকে জনতার ওপর গুলি চালানোর অনুমতি দিইনি।'
দ্য ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন। দ্য ডেইলি স্টার ২০২৪ সালের ১৮ জুলাইয়ের একটি ফোনালাপের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে হাসিনা তার ভাগ্নে ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসকে বলেন, 'আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে। ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিছি এখন। এখন লেথাল ওয়েপন ব্যবহার করবে। সেখানেই পাবে সোজা গুলি করবে। এটা বলা আছে।'
দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পদচ্যুত এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ 'আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে আন্তরিকভাবে আগ্রহী।'
তিনি বলেন, 'বর্জন বা নিষেধাজ্ঞার এই চক্র ভাঙতে হবে, কারণ এটা সরকারের বৈধতা ক্ষুণ্ণ করে। বাংলাদেশে এখন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন খুবই প্রয়োজন, যাতে দেশ আবারও পুনর্গঠনের পথে যেতে পারে।'
অথচ, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোকে ছাড়া নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে কোটি কোটি ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি, তার সরকার ২০২৪ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক দিন আগে জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করেছিল।
এর আগে গত ২৯ অক্টোবর রয়টার্স, এএফপি ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট শেখ হাসিনার লিখিত সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছিল।