জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সংকট সমাধানের দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারকে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়।

এতে উপস্থিত ছিলেন মঞ্চের সমন্বয়ক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জেএসডির সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী জনশক্তি পার্টির মহাসচিব ড. আবু ইউসূফ সেলিম সহ গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।

তারা বলেন, জুলাই সনদ ও সনদের আইনি ভিত্তি হিসেবে গণভোটকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থার জন্য ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায় রয়েছে বলে মনে করে গণতন্ত্র মঞ্চ।

'এই অচলাবস্থার মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টির দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দিয়ে সরকার দায়মুক্তির চেষ্টা করছে। গণতন্ত্র মঞ্চ মনে করে গণভোটের তারিখ নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারের। অথচ তারা পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে এই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে সৃষ্ট সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে,' বলেন মঞ্চের নেতারা।

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী এই দলগুলোর যৌথ প্ল্যাটফর্ম গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে বলা হয়, জুলাই সনদ প্রনয়ণের ক্ষেত্রে 'নোট অব ডিসেন্ট'গুলোকে যেভাবে লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই ঐকমত্য কমিশন সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর সই করা সনদ ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার মধ্যে নীতিগত পার্থক্য রয়েছে। 

'এই বিষয়গুলো উদ্ভূত পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে' উল্লেখ করে তারা বলছে, 'জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, তারা কোনো বিষয় চাপিয়ে দেবে না, বরং ফ্যাসিলিটেটরের (সহায়তাকারী) ভূমিকা পালন করবে। অথচ জুলাই সনদ সইয়ের পর তারা সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। সবশেষ গতকাল সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য তৈরির জন্য ৭ দিন সময় বেঁধে দিয়ে জানানো হয়েছে এই সময়ের পর সরকার তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। এটা একদিকে যেমন প্রতারণার শামিল অন্যদিকে সরকারের স্বৈরাচারী মানসিকতার প্রকাশ।' 

দলগুলো বলছে, 'জুলাই সনদ সইয়ের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও মোটাদাগে যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল, সরকারের ভুল পদক্ষেপ এবং নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা সেই ঐক্যে ফাটল ধরিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ২৪ এর অভ্যূত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং একইসঙ্গে সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে।' 

গণতন্ত্র মঞ্চ মনে করে, এ পরিস্থিতিতে সরকারকেই মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। একইসঙ্গে নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা থেকে সরে এসে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসন করে সরকারকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের নিয়মতান্ত্রিক পন্থা অনুসরণ করতে হবে। 

'পাশাপাশি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে মনে রাখতে হবে ঘোষিত সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তর করা না গেলে দেশ ভয়াবহ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে,' বলেন মঞ্চের নেতারা।