রংপুর অঞ্চলে মালটা-কমলার বাণিজ্যিক চাষ বেড়েছে
রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় কমলা ও মালটার বাণিজ্যিক চাষ বেড়েছে। একসময় যেখানে আম, কলা বা লিচুর বাগানই দেখা যেত, সেখানে এখন দেখা মিলছে কমলা ও মালটা বাগানের। জেলাগুলো হলো—লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারী।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ১০০ একর জমিতে ২৪০টি বাণিজ্যিক বাগান গড়ে উঠেছে। এসব বাগানে প্রায় দুই লাখ ৪০ হাজার চায়না, দার্জিলিং ম্যান্ডারিন ও দার্জিলিং নাগপুরি জাতের কমলা ও মালটা গাছ আছে।প্রতিটি গাছ থেকে ফলন পাওয়া যাচ্ছে ৪০-৫০ কেজি ফল। উ...
রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় কমলা ও মালটার বাণিজ্যিক চাষ বেড়েছে। একসময় যেখানে আম, কলা বা লিচুর বাগানই দেখা যেত, সেখানে এখন দেখা মিলছে কমলা ও মালটা বাগানের। জেলাগুলো হলো—লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারী।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ১০০ একর জমিতে ২৪০টি বাণিজ্যিক বাগান গড়ে উঠেছে। এসব বাগানে প্রায় দুই লাখ ৪০ হাজার চায়না, দার্জিলিং ম্যান্ডারিন ও দার্জিলিং নাগপুরি জাতের কমলা ও মালটা গাছ আছে।
প্রতিটি গাছ থেকে ফলন পাওয়া যাচ্ছে ৪০-৫০ কেজি ফল। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়েই গড়ে ৬০ শতাংশ মুনাফা থাকছে। ১০ বছর আগে ৬৫ একর জমিতে ৪০টি বাগান ছিল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলে উৎপাদিত মালটা ও কমলার প্রায় ৭০ শতাংশ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। ৩০ শতাংশ ফল অন্যত্র পাঠানো হয়।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার এনামুল হক আট বছর আগে আট একর জমিতে ২ হাজার ৮০০ মালটা ও কমলার গাছ লাগিয়েছিলেন। এখন তার প্রতিটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ৪০ কেজি ফলন হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'বাগান থেকে প্রতি কেজি মালটা বিক্রি করছি ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, আর কমলা ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। ফল কিনতে দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা আসছেন।'
প্রতি বছর প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ হলেও বিক্রি থেকে আয় হচ্ছে কোটি টাকার বেশি। পাশাপাশি তিনি বাগানে বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ করে বাড়তি মুনাফাও পাচ্ছেন বলে জানান।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খতা গ্রামের চাষি খলিলুর রহমান জানান, ১০ বছর আগে পাঁচ বিঘা জমিতে ৪৫০টি কমলার গাছ লাগিয়েছিলেন। এখন প্রতি বছর তার আয় হচ্ছে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা।
'নিজেই পরিচর্যা করি, তাই খরচও কম। কমলা চাষে আমি এখন স্বাবলম্বী,' বলেন তিনি।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার নগেন চন্দ্র সেন ২০১৯ সাল থেকে ১৫০টি গাছ নিয়ে কমলার বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেন।
তার ভাষ্য, 'লাভ হওয়ায় আশপাশের কৃষকরাও এখন উৎসাহী হচ্ছেন।'
একই গ্রামের মনোরঞ্জন সেন জানান, তার তিন একর জমির বাগান আগামী বছর থেকে ফল দেবে।
তিনি বলেন, 'ফলের বাগান করতে অনেক পুঁজি লাগে, এজন্য অনেকের আগ্রহ থাকলেও শুরু করতে পারেন না।'
রংপুর নগরীর সিও বাজার এলাকার ফল ব্যবসায়ী সফিয়ার রহমান বলেন, 'আমরা বাগান থেকে প্রতি কেজি কমলা ৯০ থেকে ১০০ টাকা ও মালটা ৬০ থেকে ৭০ টাকায় কিনি। আর খুচরা বিক্রিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা লাভ করছি। বিদেশি ফলের চেয়ে দাম কম হওয়ায় ক্রেতারা স্থানীয় ফলই বেশি নিচ্ছেন।'
লালমনিরহাট শহরের বিডিআর গেট এলাকার ব্যবসায়ী আরসাদ হোসেন বলেন, 'আমি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ করছি। দাম কম হওয়ায় বিক্রিও বেড়েছে।'
ফল কিনতে আসা রংপুর শহরের স্কুল শিক্ষক হরিপদ রায় বলেন, 'আমদানি করা ফল কিনতে হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। আর স্থানীয় কমলা-মালটা পাচ্ছি ১০০ থেকে ১৩০ টাকায়। আকারে ছোট হলেও স্বাদে দারুণ।'
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'এ অঞ্চলে ৮ থেকে ১০ বছর আগে বাণিজ্যিকভাবে কমলা-মালটা চাষ করা ছিল স্বপ্নের মতো। তবে কয়েকজন শখের বসে বসতভিটায় গাছ লাগিয়ে ভালো ফল পান। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা নিয়ে আজ শত শত বাগান গড়ে উঠেছে।'
'এখন স্থানীয় ফলের গুণমান উন্নত ও উৎপাদন বাড়াতে চাষিদের আধুনিক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।